জীবনের সূচনা

একদম নিরব।এতটুকু শব্দ বা আলো কিছুই ছিলনা।।কেবলি অনন্ত নিশ্চুপতায় ঘেরা ছিল এই মহাবিশ্ব। কোথাও ছিলনা প্রাণের এতটুকু উপস্থিতি। চারিদিকে কেবল অসীম নিরবতা। প্রাণ নেই,প্রাণী নেই, বস্তু নেই, কেবলি আধাঁর ছিল বাস্তব। বাকি সব মিছে। সেই সময়ের কথা বলছি। যখন আসলে সময়ের শুরুই হয়নি। শুরু হবে কি করে? কিছুইতো ছিলনা। তখনি কোনো মহাসত্তায় বুঝি খেলে গেলো কোনো মহাপরিকল্পনার চিন্তা। বুঝিবা ইচ্ছা করলেন নিজের প্র্রকাশের।ছড়িয়ে থাকা বিশাল ধূলির স্তুপে শুরু হলো আলোড়ন। সংকুচিত হতে শুরু করলো তারা। হতে থাকলো ক্ষুদ্র। ক্ষুদ্র হতে আরো ক্ষুদ্র। থামলো অতি ছোট এক বিন্দুতে পরিণত হয়ে। এরপর সে বিন্দুতে এলো শিহরন। যেন কোন মহাশক্তি সেখানে আঘাত করলো। প্রচন্ড বিস্ফোরনের মতো তারা ছড়িয়ে পড়তে লাগলো। আত্নকেন্দ্রিক কোন পরিবার যেন হঠাৎ করে একে অপরের শত্রু হয়ে গেলো।সরে যেতে লাগলো পরস্পর হতে যতটা পারা যায়। বিংশ শতকে বিজ্ঞানের রাজপূত্র হকিং বললেন, এ ছিল মহাবিস্ফোরন। বিগ ব্যংগ। তাও ছয় মিলিয়ন বছর আগের কথা। একত্রিত আকাশ ও পৃথিবীগুলো আলাদা হলো। দিন যেতে লাগলো। তারা যার যার স্থানে স্থির হলো। তৈরী হলো নীহারিকা, গ্যলাক্সী, সৌরজগৎ। প্রতিষ্ঠিত হলো বিশ্ব ব্যবস্থা। এরপর গ্রহগুলো মনযোগ দিল নিজের দিকে। প্রচন্ড উত্তপ্ত গ্রহগুলো ধীরে ধীরে ঠান্ডা হতে থাকলো। সবই চলছিল ঠিকঠাক। হঠাৎ যেন কি হলো, পৃথিবী নামক সৌরজগতের গ্রহটি বেঁকে বসলো। সবার মতো হলে যে তার চলবে না। কারণ তাকে তো ধারন করতে হবে আগামী দিনের সভ্যতা। জন্ম দিতে হবে মহাবিশ্বের সবচেয়ে বুদ্ধিমান প্রাণীদের। তৈরী করতে হবে অসীম মহাশূন্যে প্রাণের স্পন্দন। তাইতো পৃথিবী যত ঠান্ডা হতে লাগলো, তার চারপাশে জমতে লাগলো বাস্পের আস্তরন। সে আবরন একসময় হয়ে গেলো অনেক মোটা। অনেক ভারী মেঘেদের মতো। এরপর নেমে আসতে লাগলো বৃষ্টির ধারায় পৃথিবীর বুকে। পড়ছে তো পড়ছেই। থামার নামটিও নিচ্ছে না। শত শত বছর ধরে সে বৃষ্টি অনবরত চলছিল। একসময় থামলো। তখন সম্পূর্ণ পৃথিবীটা জুড়ে ছিল পানি। কোন কিছুই নেই, যেন শুধু পানির রাজত্ব। আর তার উপরে তখন তৈরী হচ্ছিল শিশু বায়ুমন্ডল। সে বায়ূমন্ডল জুড়ে ছিল নানা বিষাক্ত গ্যস। অ্যমোনিয়া, সালফেট, মিথেন আরো কত কি। সে পরিবেশে জীবিত কোন কিছুর কথা চিন্তাও করা যেতো না। এটা আজ থেকে আরো প্রায় তিনশত মিলিয়ন বছর আগের কথা। সময় বয়ে যাচ্ছিল বৈচিত্র্যহীনতায়। একদিন কি যেন কি হলো, সেই আদিম প্রতিকূল পরিবেশে, যেখানে জীবনের কোন ছোয়াঁ ছিলনা, সেখানে তৈরী হলো একটি আরএনএ অনু।রাইবো নিউক্লিয়িক এসিড। জীবনের প্রথম সূচনা। বলা নেই, কওনা নেই, একদম হঠাৎ করে। শুরু হলো নতুন ইতিহাস। নতুন করে কিছু হবার ইচ্ছা। সে ইচ্ছার পরিণতি হতে লাগলো। একসময় তৈরী হলো একটি পূণাঙ্গ কোষ। জীবদেহের প্রাথমিক কাঠামো। এখন আমরা যেমন কোষ দেখি তেমনটি নয়। একেবারে আদিম। সত্যিকার কোষের অনেক কিছুই ছিলনা সে কোষে। তাতে কি? কোষ তো। সে কোষ আরও পরিণত হলো। খাবার গ্রহন করতে পারতো, চলতে পারতো, একটি থেকে দুটি হতে পারতো। একটি প্রাণীর প্রায় সব বৈশিস্ট্য ছিল। বিজ্ঞানী বললেন, এটি ছিল অ্যমিবা। অত্যন্ত সরল এককোষী প্রাণি। ভাবা যায়। এই অ্যমিবা, যাকে দেখতে দরকার হয় শক্তিশালী অনুবীক্ষন যন্ত্রের। সেই কিনা ছিল পৃথিবীতে, বলা যায় মহাবিশ্বের প্রথম প্রাণী। এরপর একে একে জন্ম নিতে লাগলো বহুকোষী প্রাণী। জন্ম নিলো উদ্ভিদ। ততদিনে স্থল ভাগের গঠন প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছিল। পানির রাজ্যে আগমন ঘটলো মাটির। পানির থেকে জীবনের বিকাশ ঘটতে লাগলো ডাঙ্গায়।ধীরে ধীরে সে ডাঙা ভরে উঠলো নানা জাতের প্রাণি ও উদ্ভিদে। সময়ের স্রোতে আর নানা উত্থান পতনে ভয়ানক সব জীব হারিয়ে গেলো পৃথিবী হতে। এ ধরনী হয়ে উঠলো মানুষের জন্য উপযোগী। এরপর একদিন হঠাৎ করেই এলো মহাসৃষ্টির সেই মহা মাহেন্দ্রক্ষণ। মাটির বুকে আগমন ঘটলো মানুষের। শুরু হলো সভ্যতা। শত শত বছরের প্রতীক্ষার অবসান হলো। অনন্ত অসীম মহাবিশ্বর মাঝে, পৃথিবী নামক এক নাম পরিচয়হীন গ্রহের বুকে মানুষ একে দিল তার পায়ের প্রথম ছাপ। মিল্কীওয়ে নামক একটি মাঝারি মাপের গ্যলাক্সীর এক প্রান্তে অবস্থিত সৌরজগতের সদস্য পৃথিবীর জন্য দিনটি ছিল সত্যিই আনন্দের। সবুজের সমারোহে প্রাণের সম্মিলনে মহাশূন্যে সে তো হয়ে উঠলো কেবলই এক ও অনন্য।

Comments

Popular posts from this blog

রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাপানের নীরবতা

রক্ত পরীক্ষা (Blood test) এর অর্থ বুঝুন

Nostro, Vostro এবং Loro account