জাহিদ সাহেবকে একজন লোভী ডাক্তার না বলে জঙ্গি ডাক্তার বল্লে কি প্রতিবাদ করতেন?

প্রশ্নপত্রে যদি এমন লিখতো, 'জাহিদ সাহেব একজন জঙ্গি ডাক্তার। তিনি উগ্রবাদী দলের সাথে যুক্ত থেকে মানুষকে মারার পরিকল্পনা করেন....' তাহলে চিকিৎসক সংগঠনগুলো কি বলতো এই প্রশ্নে ডাক্তারদের ঢালাওভাবে জঙ্গি বলে হেয় করা হয়েছে?

চিকিৎসকরা 'ফেরেশতা' একথা অনেক চিকিৎসকই দাবী করবেন না। মানুষের মধ্যে কি ভালো-খারাপ নাই? তাহলে ভালো চিকিৎসক থাকলে খারাপ চিকিৎসক থাকবেনা কেনো? এটা নিয়ে তাদের হইচই নেহায়েতই 'ট্রাম্পিয়' আচরণ।

প্রশ্নপত্রে বলে নাইযে, 'অন্যান্য ডাক্তারদের মতোই জাহিদ সাহেব একজন লোভী ডাক্তার'। অথবা, 'জাহিদ সাহেব দ্রুত বাড়ি-গাড়ি করতে চান কারণ তিনি ডাক্তার'। অথবা, 'ডাক্তাররা জাহিদ সাহেবের মতো লোভী হয়'।

স্পস্টই বলা হয়েছে, 'জাহিদ সাহেব একজন লোভী ডাক্তার'। এখানে ব্যাক্তি জাহিদ সাহেব লোভী, ডাক্তার জাহিদ সাহেব নয়। ব্যাক্তিকে লক্ষ্য করে কথাগুলো বলা। এখন এই ব্যক্তি জাহিদ সাহেব ব্যবসায়ী হতে পারতেন, শিক্ষক হতে পারতেন, সরকারী কর্মকর্তা হতে পারতেন, পুলিশ হতে পারতেন..........ইত্যাদি ইত্যাদি। তার 'লোভ' তার ব্যক্তিগত সমস্যা। তার মধ্যে নৈতিক মূল্যবোধ না থাকলে, খারাপ-ভালোর বোধ না থাকলে, মানুষের প্রতি দরদ না থাকলে সেতো লোভী হবেই। শুধু লোভী না, অনেক কিছুই হতে পারে। লোভী মানুষকে লোভী বললে সেই পেশার সব মানুষকে কিভাবে হেয় করা হয় বোধগম্য নয়।

এইতো কিছুদিন আগেই পত্রিকাতে দেখলাম, 'অমুক ডাক্তার জঙ্গি'। কই, এই নিউজের পরে তো ডাক্তারদের কেনো জঙ্গি বলা হলো সেই প্রতিবাদের হইচই হলো না। তখনতো ব্যাপারটাকে সবাই বল্লো এটা ওই ডাক্তারের ব্যক্তিগত সমস্যা।

পত্রিকার সাংবাদিকের নিউজটাও একপেশে। তার রিপোর্টে মনে হয় এভাবে একজন লোভী ডাক্তারকে নিয়ে কথা বলাটা ঠিক হয় নাই। ডাক্তার নেতাদের দাবী ব্যক্তির পেশা উল্লেখ না করেও কথাটা বলা যেতো। সমস্যা হলো, ব্যক্তির পেশা উল্লেখ না করলে তার খারাপ কাজের, চুরির ধরণ সম্পর্কে কোন ধারণাই পাওয়া যায় না। যখন বলা হলো, লোভী ব্যক্তিটি একজন ডাক্তার তখন বোঝা যায় সে কিভাবে মানুষকে প্রতারণা করে। সে নিশ্চয়ই অন্য পেশার খারাপ মানুষেরা যেভাবে মানুষকে ঠকায়, সেভাবে ঠকাবে না। তার তো ওজনে কম দেবার সুযোগ নাই- ক্লাসে না পড়িয়ে বাসায় ব্যাচ পড়ানোর সুযোগ নাই- ফাইল আটকিয়ে ঘুষ খাবার সুযোগ নাই- ট্যক্স ফাকি দেবার সুযোগ নাই। উনি যা করতে পারেন- হসপিটালে সময় না দিয়ে প্রাইভেট প্র্যাকটিসে বেশি সময় দিতে পারেন, রোগীদের অপ্রয়োজনীয় ইনভেসটিগেশন দিতে পারেন, যে রোগের জন্য অপারেশনের প্রয়োজন নাই সেটাতে অপারেশন করতে পারেন, দায়িত্বে অবহেলা করে রোগীকে মেরে ফেলতে পারেন, ঔষুধ কোম্পানী থেকে সুবিধা নিয়ে রোগীকে কম উপকারী ঔষুধ প্রেসক্রাইব করতে পারেন..........ইত্যাদি ইত্যাদি।

একজন খারাপ মানুষ যেমন ডাক্তার হতে পারে তেমনি একজন ডাক্তারও খারাপ মানুষ হতে পারে। এটা ডাক্তারী পেশার দোষ না। ডাক্তারী পেশার মানুষকে বাঁচাতে শেখায়, লোভী হতে নয়। এরপরেও যদি কেউ কসাই ডাক্তার হয়, লোভী হয়- সেটা তার ব্যক্তিগত সমস্যা। সমগ্র ডাক্তার সমাজ মোটেই এর জন্য দায়ী নয়।

আমি বলছি না প্রশ্নপত্রে যা লেখে তা সবসময়ই সঠিক হতে হবে। কিন্তু এই ব্যাপারটা নিয়ে ডাক্তারদের হইচই দেখে মনে হচ্ছে, যে কোন বিষয়েই পানি ঘোলা করা, কাজ-কর্ম ছেড়ে যৌক্তিক-অযৌক্তিক বিষয়ে আন্দোলন করা আমাদের জাতীয় চরিত্রে পরিণত হয়েছে।

গণিতের পরীক্ষায় যখন প্রশ্ন করা হয়, গোয়ালা এতো কেজি দুধে এতো কেজি পানি মেশালে দুধে পানির পরিমাণ কত........কই, এটা নিয়ে কোন গোয়ালা সংগঠনকেতো দেখলাম না বিবৃতি দিতে। কোন গোয়ালাকে তো দেখলাম না প্রতিবাদ করতে। ডাক্তার সাহেবদেরতো তখন বলা উচিত ছিলো এই গোয়ালারা আমাদের রোগী, তাদের নিয়ে এমন আপত্তিকর অংক পাঠ্যবই- প্রশ্নপত্র থেকে সরানো উচিত।

ভাইরে, অন্যের বেলায় সব সই- খালি নিজের বেলায় হইচই।

Comments

Popular posts from this blog

রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাপানের নীরবতা

Nostro, Vostro এবং Loro account

রক্ত পরীক্ষা (Blood test) এর অর্থ বুঝুন