এমন কিছুর পেছনে না লাগা যার সম্পর্কে জ্ঞান নেই
'এমন কোন জিনিসের পেছনে লেগে যেয়ো না, যে সম্পর্কে তোমার জ্ঞান নেই। নিশ্চিতভাবেই চোখ, কান ও দিল্ সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।"
- সূরা বনী ইসরাঈল (আয়াত ১৩)
আমাদের নিজেদের জীবনের দিকে তাকালেই এই আয়াতের অর্থটা বুঝা যাবে। আমাদের প্রতিদিনের কাজের একটা অংশ হচ্ছে আমরা যা জানি না, যা সম্পর্কে আমাদের ধারণা স্পষ্ট নই তার পেছনে ঘন্টার পর ঘন্টা সময় নষ্ট করি। এটার একেবারে সহজ উদহারণ হলো সোস্যাল মিডিয়া। অপ্রয়োজনীয় গসিপ, বার্নিং ইস্যূ, সেলিব্রেটিদের লাইফস্টাইল, ইত্যাদি নানা ঘটনার পেছনে আমরা পড়ে থাকি। শুধু যে পড়ে থাকি তা নয়। বরং সেটার পেছনে এমনভাবে গবেষণা করি যেন আরেকটু হলেই একটা পিএইচডি ডিগ্রি পেয়ে যাবো।
তার বিপরীতে, কুরআন আমাদের বলছে যে আমরা বরং নিজেদের ব্যক্তিগত আর সামাজিক জীবনে ধারণা এবং অনুমানের পরিবর্তে 'জ্ঞানের' পেছনে চলবো। এই আয়াতের শিক্ষাকে প্রয়োগ করা হয়েছে ইসলামি নৈতিক ব্যবস্থায়, আইনে, রাজনীতিতে, দেশ শাসনে, জ্ঞান-বিজ্ঞানে, শিক্ষা ব্যবস্থায়।
চলুন দেখি, এই আয়াতকে মূলনীতি ধরে কোন কোন ক্ষেত্রে কি ধরণের নীতি গ্রহন করা হয়েছে।
নৈতিকতার ক্ষেত্রে - কুধারণা থেকে দূরে থাকো এবং কোন ব্যক্তি বা দলের বিরুদ্ধে কোন প্রকার অনুসন্ধান ছাড়াই কোন দোষারোপ করো না।
আইনের ক্ষেত্রে - নিছক সন্দেহ বশত কারো বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ গ্রহন করা যাবে না।
অপরাধ তদন্তের ক্ষেত্রে - অনুমানের ভিত্তিতে কাউকে গ্রেপ্তার, মারধর বা জেলে আটক করা সম্পূর্ণ অবৈধ।
বিজাতিদের সাথে আচরণের ক্ষেত্রে - অনুসন্ধান ছাড়া কারোর বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ গ্রহন করা যাবে না এবং নিছক সন্দেহের ভিত্তিতে কোন গুজব ছড়ানো যাবে না।
শিক্ষা ব্যবস্থার ক্ষেত্রে - নিছক আন্দাজ-অনুমান এবং দীর্ঘসূত্রীতাময় ধারণা ও কল্পনা নির্ভর জ্ঞানকে অপছন্দ করা হয়েছে।
আকীদা-বিশ্বাসের ক্ষেত্রে - কল্পনা ও কুসংস্কারের মূল উপড়ে ফেলা হয়েছে এবং ঈমানদারদের শুধুমাত্র আল্লাহ ও রসূল (সা) প্রদত্ত জ্ঞানের ভিত্তিতে প্রমাণিত বিষয় মেনে নেবার শিক্ষা দেয়া হয়েছে।
আমরা এমন কিছুর পেছনে না পড়ে থাকি, না লেগে যাই যার সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান নাই। আল্লাহ তা'য়ালা আমাদের সঠিক পথ নির্দেশ প্রদান করুন, আমীন।
তথ্যসূত্র: তাফহীমুল কুরআন। পৃষ্ঠা: ১৩৫, খন্ড: ৭ম
Comments
Post a Comment