The Alchemist- স্বপ্নের পেছনে ছুটে চলা





The Alchemist বইটা পড়েছেন? না পড়লে পড়ে ফেলুন। একজন মানুষের জীবনের লক্ষ্য ঠিক করার জন্য যতগুলো ভালো বই পড়া প্রয়োজন- The Alchemist তার মধ্যে অন্যতম। একদম বাড়িয়ে বলছি না। সময় করে পড়ে ফেলুন। এরপর বুঝবেন, একজন লেখক কতটা গভীরভাবে মানুষের জীবনবোধকে তুলে আনতে পারে। কতটা সহজ ভাষায় পাঠকের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়- তুমি ঠিক কি কারণে কখনোই সফল হতে পার না।

খুব আপসোস হচ্ছে, বইটা যদি ছাত্রজীবনে পড়ার সুযোগ পেতাম। বিশেষ করে যখন স্কুলে পড়ি বা আরও পরে বিশ্ববিদ্যালয়ে - তখন এমন একটা বই হয়তো দৃষ্টিভঙ্গিটাকে বদলে দিত। আরও অনেক বিষয়ে সুন্দর সিদ্ধান্ত গ্রহনে সাহায্য করত। যা হবার তাতো হয়েই গেছে। এটাকে বরং বইয়ের 'ইংলিশম্যানের' মতো করে বলি, 'তাও ভালো যে এটা এখন পড়তে পেরেছি। এমনওতো হতে পারত যে এটা আরো দশ বা পনের বছর পরে পড়ার সুযোগ পেতাম। অথবা কখনোই পেতাম না। এটা কি বিরাট ব্যাপার না?

'মানুষ কেন সফল হয়?' অথবা 'মানুষ কেন তার গন্তব্যে পৌঁছুতে পারে না'? উহু। এটা ফুটপাতে 'আপনিও সফল হবেন', 'সাফল্য লাভের একশ উপায়', 'সহজে কোটিপতি হবার কৌশল' - এ টাইপের কিছু না। কারণ, পাওলো কোয়েলহো দেখিয়েছেন যে, "সাফল্যের কোন শর্টকার্ট নাই।" শর্টকার্টে লাভবান হওয়া যায় চুরি করে, ডাকাতি করে, জুয়া খেলে। যাবেন সে পথে? যাবেন না।

উপন্যাসের নায়ক এক কিশোর। স্পেনের আন্দালুসিয়ায় তার বাস। একটু বড় হবার পর সে চাইল ভ্রমনে বের হবে। তার বাবা বলল, ঘুরে বেড়ানোর জন্য মেষপালক হওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। কিছু ভেড়া কিনে সে হয়ে গেল মেষপালক। তার ভেড়ার পাল নিয়ে সে ঘুরে বেড়াতে লাগল এখান থেকে সেখানে। ভেড়ার সাথে থাকতে থাকতে একসময় সে তাদের ভাষা বুঝতে পারে- তাদের চাহিদা, অভাব, অভিযোগ সে উপলদ্ধি করে। বিনিময়ে সে পায় ধৈর্য্যের শিক্ষা। তার সময় কাটে কিছুদিন আগেই পরিচয় হওয়া ব্যবসায়ীর কন্যাকে নতুন কি গল্প শোনাবে তার চিন্তার আর স্বপ্নিল চোখে সমুদ্রের অপর পাড়ের মূর দেশের দিকে চেয়ে। স্পেনের উপকূল থেকে জাহাজে মাত্র দু’ ঘন্টার পথ। অথচ তার মতো আর কোন মেষপালকই ওখানে যাবার ইচ্ছা করেনি।

হঠাৎ করে একদিন সে স্বপ্ন দেখে গুপ্তধনের। এরপর থেকে তার ছুটে চলা সেই গুপ্তধনের রহস্যের সন্ধানে। সমুদ্র পাড়ি দিয়ে কিশোর যায় অচেনা মূর দেশে। স্পেনে আরব মুসলমানদের মূর নামেই ডাকা হয়। এক সময়কার স্পেন বিজয়ী মুসলমানরা এসেছিল সমুদ্র পাড়ি দিয়ে আরব দেশ হতে। সেখান থেকে সমুদ্রের উপর দিয়ে যে বাতাস আসে তাকে তারা বলে ল্যাভানটার। সে আরেক গল্প।

সদ্য আরবে এসে এক ঠগবাজের কাছে অভিযানের জন্য জমানো সব সম্পদ খুইয়ে ফেলে। এরপর সে কাজ নেয় এক ক্রিস্টালের দোকানের কর্মচারী হিসেবে। পরিশ্রমী, ধৈর্য্যশীল এই কিশোর সেখানেও তার বুদ্ধিমত্তা, প্রজ্ঞা দিয়ে চমক লাগিয়ে দেয়। কিন্তু সে ভোলেনা তার স্বপ্বের কথা। সমৃদ্ধির জীবন ছেড়ে সে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাড়ি দেয় দুর্গম সাহারা মরুভূমি। পৌঁছে এক মরুদ্যানে। প্রকৃতির ইশারায় শান্ত, নিরাপদ মরুদ্যানকে বাঁচিয়ে দেয় ভয়ানক শত্রুর আক্রমন থেকে। পরিচয় হয় ফাতেমা নামের বেদুঈন কন্যার সাথে। সে তাকে বলে বেদুঈন মেয়েরা তাদের স্বামীর জন্য অনন্তকাল অপেক্ষা করে থাকে। সুতরাং, সে যেনো পিছুটান ভুলে গুপ্তধনের সন্ধানে বের হয়। কিশোর এগিয়ে যায়। পথে পথে আক্রান্ত হয়। এরপরও সে থামেনি। প্রকৃতির ইশারা থেকে ঠিক করে নেয় যাত্রাপথ। তবুও স্বপ্নের পেছনে ছুটে চলা এই কিশোর কখনো বিচ্যুত হয়নি তার বিশ্বাস থেকে। সে জানত তার গুপ্তধনের সন্ধান সে পাবেই। এসকল বাধা-বিপত্তি তাকে সাহস জুগিয়েছে। মরুভূমির নির্জনতা, বাতাসের মুখরতা আর ভেড়ার পালের অপরিসীম ধৈর্য্য তাকে শিখিয়েছে মহাবিশ্বের ভাষা। সে ভাষায় সে কথা বলেছে আকাশের সাথে, সূর্যের সাথে। নিজেকে পরিণত করেছে প্রচন্ড ঝড় সাইমুমে। এসকল কাজে তাকে সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসে রহস্যময় আলকেমিস্ট।

আলকেমিস্ট হলো এক রহস্যময় ব্যক্তি যে লোহাকে স্বর্ণে রূপান্তর করতে পারে। যে জানে মহাবিশ্বের ভাষা। ইংলিশম্যান তার সন্ধানে বছরের পর বছর ঘুরে ফেরে। লোকে বলে তার বয়স নাকি দু'শো বছর। কিশোর নায়কের লক্ষ্যের প্রতি দৃঢ় মনোবল, প্রতিজ্ঞা আলকেমিস্টকে মুগ্ধ করে। কিশোরকে পথ দেখিয়ে সে পৌঁছে দেয় পিরামিডের কাছে।

দীর্ঘ উত্থান আর পতনের পর কিশোর ঠিকই তার গুপ্তধন খুঁজে পায়। তার লক্ষ্যে সে ঠিকই পৌঁছে। কিন্তু এ পরিশ্রম আর কষ্ট কিন্তু তাকে গুপ্তধনের চাইতেও অনেক অনেক বড় জিনিস উপহার দেয়। তা হলো জীবনের গুঢ় রহস্য- মহাবিশ্বের ভাষা বোঝার ক্ষমতা। যে ভাষায় স্রষ্টা আর সৃষ্টির সর্ম্পক প্রতিষ্ঠিত। যে ভাষা বুঝলে সৃষ্টি বুঝে যায় তার স্রষ্টার উদ্দেশ্য।

বইয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং আকর্ষনীয় অংশ হলো 'মুখবন্ধ।' আমার মনে হয় বইটির যে ত্রিশ লক্ষ কপি পৃথিবীজুড়ে বিক্রি হয়েছে তার মূল কারণ এই মুখবন্ধ। মানুষের ব্যর্থ হবার জন্য লেখক চারটি কারণ এখানে উল্লেখ করেছেন। পড়ে দেখুন, মনে হবে এগুলো বুঝি আপনার জীবনের সাথেও মিলে যায়।

যদি সম্ভব হয়, বইটির ইংরেজি ভার্সনটা পড়বেন। বাংলায় বেশ কয়েকটি অনুবাদ হয়েছে কিন্তু কোনটাই ইংরেজির মতো হয়নি। আসলে একেক ভাষার আবেদন একেক রকম। ইংলিশ টেক্সট খুবই সাবলিল। এমনকি ইংরেজিতে যে পটু না তার জন্যও পড়তে মোটেই কষ্ট হয় না। অনলাইনে পিডিএফ কপি সহজলভ্য। তবে হার্ড কপি বই পড়ার মজা তো আর পিডিএফ এ পাওয়া যায় না।

শুভ কামনা রইলো। আশা করছি একটি সুন্দর বইয়ের পেছনে ব্যয় করার মতো কিছুটা সময় আপনি অবশ্যই বের করে নিতে পারবেন। :)))



Comments

  1. ভাল লাগলো। বইটা পড়তেই হবে। কোয়েলহোর ব্লগের সাথে পরিচয় হল অল্প কিছুদিন আগেই। একটা ব্লগ পড়ে মুগ্ধ হয়ে অনুবাদ করে ফেলেছিলাম সেই পোস্টটি। শক্তিমান একজন লেখক।

    ধন্যবাদ আপনার লেখার জন্য।

    ReplyDelete
  2. This comment has been removed by the author.

    ReplyDelete
  3. গল্প যে টুকু দিয়েছেন ভালোই আকৃষ্ট করেছে আমাকে। পড়ে নেব........

    ReplyDelete
  4. এত কিছু বুঝি না, হহার্ড কপি ভাল হলেও আমাকে আগের মত পিডিএফ কে বই করে দেবেন।

    ReplyDelete
  5. বইটি আজ ই কিনছি ইনশাল্লাহ।

    ReplyDelete
    Replies
    1. কিনে ফেলেন স্যার........প্রয়োজনে বইয়ের উপর আমি একটা অটোগ্রাফ দিয়ে দেবো.... :p

      Delete
  6. Replies
    1. এসব বই গিফট পেয়ে পড়লে কম উপকার পাওয়া যায়.........কিনে পড়তে হয়... :p বাই দ্যা ওয়ে, বইয়ের মালিকানা তোমার ভাবীর.....আমার না... :D

      Delete
  7. ভাইয়া আপনি এতটা সুন্দর করে লিখেছেন!!! এই বইটা পড়ার ইচ্ছা ছিলো, এখন ইচ্ছাটা বাড়লো।- স্বর্ণা

    ReplyDelete
  8. পড়ে নিব ইনশাল্লাহ

    ReplyDelete

Post a Comment

Popular posts from this blog

রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাপানের নীরবতা

রক্ত পরীক্ষা (Blood test) এর অর্থ বুঝুন

Nostro, Vostro এবং Loro account