একা মেয়েটি

বিকেল শেষ হয়ে আসছে। একটু পরেই সন্ধ্যা হবে। মেয়েটি মন খারাপ করে বারান্দায় একা বসে আছে। অনেক সময় ধরে ফেইসবুক, ইনস্ট্রাগ্রাম, ভাইবারে বন্ধুদের ধরতে চেষ্টা করেছে। সবাই অফ লাইনে। প্রচন্ড বিরক্তি নিয়ে মোবাইলের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকে ও। বেশ কিছু সময় ধরে সবগুলো নোটিফিকেশন চেক করে। কিছু পেইজে লাইক করে, শেয়ার করে। এরপর ফোনটা বিছানার ওপর ছুড়ে ফেলে দেয়। ও বসে বসে বোর হচ্ছে কিন্তু ওর সাথে গল্প করার কেউ নেই। টিভি দেখতেও ভালো লাগছে না। আম্মু রান্নাঘরে রান্না করছে। শংকরের এই ছোট্ট, সুন্দর বাসাটায় ও এবং ওর আম্মু থাকে। বাসায় একটি মাত্র বারান্দা। বারান্দায় দাঁড়ালে নিচের রাস্তা দেখা যায়। রাস্তায় পাশে একটা মন্দির ছিলো। এখন ভেঙ্গে ফেলেছে। ওটা দেখা যায়। ওই মন্দিরের পাশে একজন মানুষ জুতো বিক্রি করে। মনে হয় ওপর থেকে হাত বাড়ালেই পছন্দ করে একজোড়া জুতো নিয়ে যাওয়া যায়। অথবা চিৎকার করে লোকটাকে বলা যায়, ‘ভাই, আমার ঐ জুতোটা পছন্দ হয়েছে। উপরে দিয়ে যান’। বারান্দা দিয়ে সামনের বিল্ডিংটাও দেখা যায়। কিন্তু আজ মেয়েটার মন অনেক খারাপ। আশে পাশে এতো কিছু! কিছুই দেখতে ইচ্ছে করছে না। মনে হচ্ছে, সব কিছু বিরাট একটা হাতুড়ি দিয়ে ভেঙ্গে দিলে খুব ভালো লাগতো। কি সুন্দর বাতাস হচ্ছে! ওর বাতাস ভালো লাগে। ও আকাশ দেখে। সন্ধ্যার একটু আগে আগে আকাশটা এতো সুন্দর হয়? ও আকাশ দেখতে থাকে। বারান্দা দিয়ে এতো বিরাট একটা আকাশ দেখা যায়, ও আগে জানতোই না। হঠাৎ করে কিছু পাখি কিচির-মিচির করে ডাকতে থাকে। পাখিগুলো বাসায় যাচ্ছে। আচ্ছা, পাখিগুলো এতো দুস্টু কেনো? সারাদিন শুধু ডাকতেই থাকে আর এখানে সেখানে ঘুরে বেড়ায়। মেয়েটার মনে হয়, ওর যদি একটা পাখা থাকতো, ও পাখির মতোই ঘুরে বেড়াতো। পাখিদের অনেক মজা। আকাশে উড়ে বেড়ায়। যেখানে ইচ্ছে সেখানে যায়। ওদের ক্লাস করতে হয় না। টিচারের বাসায় যেতে হয় না। হোমওয়ার্ক করতে হয় না। মেয়েটার হঠাৎ মনে হয়, আচ্ছা, পাখিদের কি কখনো মন খারাপ হয়? ওরা কি কখনো বোর ফিল করে? মেয়েটা মনোযোগ দিয়ে পাখি দেখে। নিচের রাস্তা দিয়ে অনেক গুলো মানুষ যাচ্ছে। একেক জন মানুষ একেকরকম। কেউ লুঙ্গি পরা, কেউ প্যান্ট। কেউ শার্ট গায়ে দিয়ে যাচ্ছে, আর কেউ টি-শার্ট। একটা রিক্সা যাচ্ছে। রিক্সায় মোটা একজন মানুষ বসে আছে। আর যে লোকটা রিক্সা চালাচ্ছে তার গায়ে কোন জামা নাই। সারা শরীর ঘামে ভিজে গেছে। মেয়েটা সামনের দিকে তাকায়। ওদের বাসা থেকে একটু দূরে অনেক পুরনো একটি বিল্ডিং। ওটার দেয়ালে অনেকগুলো বটগাছ উঠেছে। গাছগুলো মাটিতে না হয়ে বিল্ডিং এ কেনো হলো কে জানে? বিল্ডিংটার দিকে তাকালে ওর খুব ভয় হয়। এটা এতো পুরনো যে, মনে হয় একটু জোরে একটা ঝড় হলেই ঠাস করে কাত হয়ে পড়ে যাবে। আকাশে একটু একটু মেঘ হচ্ছে। ইশ্, যদি বৃষ্টি হতো! মেয়েটা মনে মনে দোয়া করে যেনো বৃষ্টি হয়। বাতাস আগের থেকে একটু জোরে বইছে। মেয়েটার খুব ভালো লাগে। হঠাৎ করেই ওর মনে হয়, ও একা নয়। ওই বিশাল আকাশ ওর বন্ধু, উড়ে যাচ্ছে যে পাখিগুলো, ওগুলোও ওর বন্ধু। আশেপাশের বাড়িগুলো, গাছগুলো, মানুষগুলো সবাই ওর বন্ধু। মেয়েটা মাঝে মাঝে নিজের সাথে নিজে কথা বলে। ওর খুব ভালো লাগে নিজের সাথে কথা বলতে। কিন্তু এখন এখন ওর মনে হচ্ছে, ও চাইলেই আকাশ, বাতাস, পাখি, গাছ সবার সাথে কথা বলতে পারে। হঠাৎ করেই মেয়েটার মন ভালো হয়ে যায়। এখন আর বোর লাগছে না। আম্মু রান্নাঘর থেকে ডাকছে, ‘এই ফাজিল মেয়ে। এতোক্ষণ ধরে ডাকছি তোর কানে যায় না?”। কি মজা! আম্মুর বকাটাও খারাপ লাগছে না। শুনতে ভালো লাগছে। আম্মু আরো কিছুক্ষণ ডাকতে থাকুক। বাহিরে সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে। আকাশটা আর দেখা যাচ্ছে না। মেয়েটি রুমের ভেতর চলে আসে। বাহিরে আকাশে অনেক মেঘ হয়েছে। কিন্তু ওর মনের আকাশটা একদম নীল। সূর্যের আলোতে ঝলমল করছে। সেখানে পাখি উড়ছে। অনেক অনেক পাখি। 

Comments

Popular posts from this blog

রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাপানের নীরবতা

রক্ত পরীক্ষা (Blood test) এর অর্থ বুঝুন

Nostro, Vostro এবং Loro account