হৃদপিন্ডটা তার নিজের ছিলো
জনাব নাহিদ শিক্ষক মানুষ। আজীবন স্কুলে শিক্ষকতা করেছেন। আজকে ওনার ওপেন হার্ট সার্জারি। স্বাধীনতার ৭০ বছর পর চিকিৎসা বিজ্ঞানের এতো বেশি অগ্রগতি হয়েছে যে, এই সব টুকটাক ওপেন হার্ট সার্জারিকে ডাক্তাররা হিসাবের মধ্যেও ধরে না। তারপরেও, অপারেশন বলে কথা। একটা জলজ্যান্ত হার্টকে কেটে ছিড়ে আবার জায়গামত বসিয়ে দেবে। ভাবতেই জনাব নাহিদের কিঞ্চিত ভয় অনুভূত হচ্ছে। অপারেশন থিয়েটারে ঢোকার আগে থেকেই নিয়ত করেছেন অপারেশন শুরু হবার আগ পর্যন্ত এক হাজারবার বড় খতমের দোয়া পড়বেন। এখনো দোয়া পাঠ চলছে। কিন্তু অপারেশনের আতঙ্কে কতবার পড়েছেন ভুলে গেছেন। কে জানি বল্লো ডাক্তার আসছে। অপারশন রুমের সবাই রেডি। নাহিদ সাহেব খেয়াল করলেন তার হাত একটু একটু কাঁপছে। বড় খতমের দোয়া না পড়ে ভুলে আসতাগফিরুল্লাহ পড়া শুরু করেছেন।
ডাক্তারের মুখে মাস্ক। হাতে কাচি নিয়ে অপারেশন বেডে শুয়ে থাকা রোগী নাহিদ সাহেবের দিকে এগোলেন। চোখাচোখি হতেই ডাক্তার থমকে গেলেন। মুখের মাস্ক ছুড়ে ফেলে আনন্দে চিকৎকার করে উঠলেন, স্যার আপনি???
নাহিদ সাহেব আগতাগফিরুল্লাহ কতবার পড়েছেন সে হিসাব মেলানোর চেষ্টা করছিলেন। একজন মানুষ তার হার্টটা খুলে নাড়াচাড়া করছেন, এটা ভাবার চাইতে দোয়া পড়া ভালো। চিন্তা অন্যদিকে থাকবে। কিন্তু ডাক্তারের চিৎকারে নাহিদ সাহেবের দুর্বল হার্টও দুইবার বিট মিস করলো। মুখের দিকে তাকালেন। জীবনে হাজার হাজার ব্যাচ ছাত্র পড়িয়েছেন। পুলিশের তালিকভুক্ত সন্ত্রাসী থেকে মন্ত্রী, সবখানেই তার ছাত্র আছে। এ ছেলে ক’টার ব্যাচে পড়তো কে জানে!
হঠাৎ করেই নাহিদ সাহেব ডাক্তারকে চিনতে পারলেন। এতো পল্টু। একে তিনি নিজের হাতে পিএসসিতে প্রশ্নপত্র সরবরাহ করেছেন। জেএসসিতে এবং এস.এস.সিতে প্রশ্নপত্রের সাথে উত্তরপত্রও দিয়েছেন। উনার স্কুলে এস.এস.সি পর্যন্ত। তাই কলেজের খবর জানেন না। তবে তার বিশ্বাস, তার মতো মহৎপ্রাণ শিক্ষকের কল্যাণেরই সে এ পর্যন্ত এসেছে। আগে তাদের সময় শিক্ষকরা তাদের ছাত্রদের নিয়ে গর্ব করতেন। এখন নাহিদ সাহেব তার ছাত্রকে দেখে আতংক বোধ করছেন। তার হাত এবং পা দুটোই কাঁপছে। এতোক্ষণ শুধু হার্টটা নিয়েই টেনশন হচ্ছিলো। এখনো টেনশন হচ্ছে পুরো জীবন নিয়ে।
কিছুটা বিষ্ময়, কিছুটা বিরক্ত নিয়ে পল্টুকে জিজ্ঞেস করলেন, এখানে কি করিস?
অনেক দিন পর স্যারের সাথে পল্টুর দেখা। আহা, স্যার কি মমতা নিয়ে তাকে পরীক্ষার আগের রাতে প্রশ্ন সলভ করাতেন। কি মধুর ছিলো দিনগুলো। আনন্দিত গলায় পল্টু স্যারকে আশ্বস্ত করলো, “ভয় পাবেন না স্যার। কখন যে আপনার পেট কেটে আবার জোড়া লাগিয়ে দেবো টেরই পাবেন না”।
নাহিদ সাহেব দৌড়াচ্ছেন। অপারেশনের ড্রেস, সেলাইনের ক্যানাল, সুচ লাগানো অবস্থায় তিনি দৌড়ে হসপিটালের কম্পাউন্ড পার হলেন। তার স্পষ্ট মনে আছে, বাংলা ছবিতে নায়িকার বাবার যখন হার্ট এ্যাটাক করে মরে যাবার দরকার হতো, তারা বুকের বাম পাশে হাত দিয়ে মরে যেতো। হারামজাদা পল্টু মনে হয় তাকে সিজারের রোগী মনে করেছে। তিনি দৌড়াচ্ছেন আর চিৎকার করছেন, ‘হারামজাদা পকেটে করে একটা ফিজিওলজির বই নিয়ে ঢুকলেও কিছুটা ভরসা পেতাম........আমি বেঁচে থাকতে তোকে আমার হার্ট ছুতে দেবো না.....নাআআআআআ.....’
নাহিদ সাহেব সোজা গিয়ে উঠলেন যে হসপিটালে ভারতীয় ডাক্তার বসে। এরাই এখন এ দেশের ভরসা। নাহিস সাহেব স্ত্রীর সাথে ঝগড়া করে দেশপ্রেম দেখাতে গিয়েছেন। অপারেশন করালে দেশের ডাক্তারকে দিয়েই করাবো। মরলে তার হাতেই মরবো। যত্তোসব। এখন শান্তি এবং ভরসা দুটোই পাচ্ছেন। মানুষ আজকাল যা করার ভারতীয় প্রফেশনালদের দিয়েই করায়। অন্য দেশের মানুষও আছে। গত মাসেই তিনি এক ভারতীয় আর্কিটেক্ট দিয়ে বাড়ির ডিজাইন করিয়েছেন। আজকাল প্রায় সবকিছুই ওরা করে। যেমন কাজের মান, তেমনি দক্ষতা। ভার্সিটিগুলোতেও ওরা পড়ায়। কি সব নামী-দামী শিক্ষক, গবেষক। ভাবতেই নাহিদ সাহেবের গর্বে বুকটা বড় হয়ে যাবার কথা। হচ্ছে না। তার বুকের ব্যাথাটা আরো বেড়েছে। চিনচিন করে ব্যাথাটা পুরো শরীরে ছড়িয়ে যাচ্ছে। তার ভয় হচ্ছে, ঘুমিয়ে পড়লেই পল্টু এসে তার পেট কাটবে। এরপর সেখান দিয়ে হাত দিয়ে তার হৃদপিন্ডটা টেনে বের করবে। হঠাৎ করে নাহিদ সাহেব আবিস্কার করলেন, হাতটা তার নিজের। সেখানে একটা হৃদপিন্ড ধরা। সেটার রং সবুজ। মাঝে গর্তগুলো লাল। নাহিদ সাহেব গভীর ঘুমে অচেতন। তার অপারেশন হচ্ছে। তখনো তিনি তার হাতে খামছে ধরে আছেন একটা লাল-সবুজ হৃদপিন্ড। চুইয়ে চুইয়ে রক্ত পড়ছে সেখান থেকে। নাহিদ সাহেব বোঝার চেষ্টা করছেন, তিনি জেঁগে আছেন, না ঘুমিয়ে আছেন। তবে একটা বিষয় তিনি নিশ্চিত, এই হাতে ধরা হৃদপিন্ডটা তার নিজের। অন্য কারো নয়।
ডাক্তারের মুখে মাস্ক। হাতে কাচি নিয়ে অপারেশন বেডে শুয়ে থাকা রোগী নাহিদ সাহেবের দিকে এগোলেন। চোখাচোখি হতেই ডাক্তার থমকে গেলেন। মুখের মাস্ক ছুড়ে ফেলে আনন্দে চিকৎকার করে উঠলেন, স্যার আপনি???
নাহিদ সাহেব আগতাগফিরুল্লাহ কতবার পড়েছেন সে হিসাব মেলানোর চেষ্টা করছিলেন। একজন মানুষ তার হার্টটা খুলে নাড়াচাড়া করছেন, এটা ভাবার চাইতে দোয়া পড়া ভালো। চিন্তা অন্যদিকে থাকবে। কিন্তু ডাক্তারের চিৎকারে নাহিদ সাহেবের দুর্বল হার্টও দুইবার বিট মিস করলো। মুখের দিকে তাকালেন। জীবনে হাজার হাজার ব্যাচ ছাত্র পড়িয়েছেন। পুলিশের তালিকভুক্ত সন্ত্রাসী থেকে মন্ত্রী, সবখানেই তার ছাত্র আছে। এ ছেলে ক’টার ব্যাচে পড়তো কে জানে!
হঠাৎ করেই নাহিদ সাহেব ডাক্তারকে চিনতে পারলেন। এতো পল্টু। একে তিনি নিজের হাতে পিএসসিতে প্রশ্নপত্র সরবরাহ করেছেন। জেএসসিতে এবং এস.এস.সিতে প্রশ্নপত্রের সাথে উত্তরপত্রও দিয়েছেন। উনার স্কুলে এস.এস.সি পর্যন্ত। তাই কলেজের খবর জানেন না। তবে তার বিশ্বাস, তার মতো মহৎপ্রাণ শিক্ষকের কল্যাণেরই সে এ পর্যন্ত এসেছে। আগে তাদের সময় শিক্ষকরা তাদের ছাত্রদের নিয়ে গর্ব করতেন। এখন নাহিদ সাহেব তার ছাত্রকে দেখে আতংক বোধ করছেন। তার হাত এবং পা দুটোই কাঁপছে। এতোক্ষণ শুধু হার্টটা নিয়েই টেনশন হচ্ছিলো। এখনো টেনশন হচ্ছে পুরো জীবন নিয়ে।
কিছুটা বিষ্ময়, কিছুটা বিরক্ত নিয়ে পল্টুকে জিজ্ঞেস করলেন, এখানে কি করিস?
অনেক দিন পর স্যারের সাথে পল্টুর দেখা। আহা, স্যার কি মমতা নিয়ে তাকে পরীক্ষার আগের রাতে প্রশ্ন সলভ করাতেন। কি মধুর ছিলো দিনগুলো। আনন্দিত গলায় পল্টু স্যারকে আশ্বস্ত করলো, “ভয় পাবেন না স্যার। কখন যে আপনার পেট কেটে আবার জোড়া লাগিয়ে দেবো টেরই পাবেন না”।
নাহিদ সাহেব দৌড়াচ্ছেন। অপারেশনের ড্রেস, সেলাইনের ক্যানাল, সুচ লাগানো অবস্থায় তিনি দৌড়ে হসপিটালের কম্পাউন্ড পার হলেন। তার স্পষ্ট মনে আছে, বাংলা ছবিতে নায়িকার বাবার যখন হার্ট এ্যাটাক করে মরে যাবার দরকার হতো, তারা বুকের বাম পাশে হাত দিয়ে মরে যেতো। হারামজাদা পল্টু মনে হয় তাকে সিজারের রোগী মনে করেছে। তিনি দৌড়াচ্ছেন আর চিৎকার করছেন, ‘হারামজাদা পকেটে করে একটা ফিজিওলজির বই নিয়ে ঢুকলেও কিছুটা ভরসা পেতাম........আমি বেঁচে থাকতে তোকে আমার হার্ট ছুতে দেবো না.....নাআআআআআ.....’
নাহিদ সাহেব সোজা গিয়ে উঠলেন যে হসপিটালে ভারতীয় ডাক্তার বসে। এরাই এখন এ দেশের ভরসা। নাহিস সাহেব স্ত্রীর সাথে ঝগড়া করে দেশপ্রেম দেখাতে গিয়েছেন। অপারেশন করালে দেশের ডাক্তারকে দিয়েই করাবো। মরলে তার হাতেই মরবো। যত্তোসব। এখন শান্তি এবং ভরসা দুটোই পাচ্ছেন। মানুষ আজকাল যা করার ভারতীয় প্রফেশনালদের দিয়েই করায়। অন্য দেশের মানুষও আছে। গত মাসেই তিনি এক ভারতীয় আর্কিটেক্ট দিয়ে বাড়ির ডিজাইন করিয়েছেন। আজকাল প্রায় সবকিছুই ওরা করে। যেমন কাজের মান, তেমনি দক্ষতা। ভার্সিটিগুলোতেও ওরা পড়ায়। কি সব নামী-দামী শিক্ষক, গবেষক। ভাবতেই নাহিদ সাহেবের গর্বে বুকটা বড় হয়ে যাবার কথা। হচ্ছে না। তার বুকের ব্যাথাটা আরো বেড়েছে। চিনচিন করে ব্যাথাটা পুরো শরীরে ছড়িয়ে যাচ্ছে। তার ভয় হচ্ছে, ঘুমিয়ে পড়লেই পল্টু এসে তার পেট কাটবে। এরপর সেখান দিয়ে হাত দিয়ে তার হৃদপিন্ডটা টেনে বের করবে। হঠাৎ করে নাহিদ সাহেব আবিস্কার করলেন, হাতটা তার নিজের। সেখানে একটা হৃদপিন্ড ধরা। সেটার রং সবুজ। মাঝে গর্তগুলো লাল। নাহিদ সাহেব গভীর ঘুমে অচেতন। তার অপারেশন হচ্ছে। তখনো তিনি তার হাতে খামছে ধরে আছেন একটা লাল-সবুজ হৃদপিন্ড। চুইয়ে চুইয়ে রক্ত পড়ছে সেখান থেকে। নাহিদ সাহেব বোঝার চেষ্টা করছেন, তিনি জেঁগে আছেন, না ঘুমিয়ে আছেন। তবে একটা বিষয় তিনি নিশ্চিত, এই হাতে ধরা হৃদপিন্ডটা তার নিজের। অন্য কারো নয়।
Comments
Post a Comment