‌একুশে অক্টোবর, দুপুর

বৃষ্টির মূহুর্ত্বগুলো খুব সুন্দর। অবসরে সময়ে গাছের পাতায় পড়ে টুকরো টুকরো হয়ে যাওয়া বৃষ্টির ফোটাগুলোকে অনুভব করি। সব ব্যবস্তাকে ছুটি দিয়ে আয়েশি হয়ে শব্দের ছন্দপতন শুনতে থাকি। ঝুম বৃষ্টিতে মনে হয় পৃথিবীটা জুড়ে যদি কেবল সবুজ সব গাছ আর তার পাতায় ছন্দের মতন নেমে আসে ফোঁটা ফোঁটা পানির কণা থাকতো!

অঝরে বৃষ্টি পড়ছে বুঝতে পারিনি। অফিসের দরজা খুলতেই অবাক হলাম। কিছুক্ষণ পূর্বেও রোদ ছিলো। অপেক্ষ করবো কি করবো না ভাবতে ভাবতেই নিচে নেমে এলাম। ব্যাগ থেকে ছাতাটা খুলে নেমে গেলাম মোজাইক বাঁধানো ফুটপাতে। শো'রুম গুলোর সামনের অংশ কাঁদা আর পিচ্ছিল পাথরে একাকার । তার উপর দিয়ে হাটতে হবে, খুব সাবধানে। অপেক্ষা করলেই পারতাম। অথবা ছাতাটা বন্ধ করে বৃষ্টিতে ভেঁজা যেতো। আধো ভেঁজা হয়ে পকেটের সেল ফোন আর ওয়ালেট সামলাতে সামলাতে গিয়ে পড়লাম সতর্কভাবে রাস্তা পাহারা দেয়া পুলিশের সামনে। প্রধানমন্ত্রী যাবেন। রাস্তায় কোন বাস নেই। প্রবল বৃষ্টি আর ফাঁকা রাস্তা। উঁচু দালানগুলোর উপরে সতর্কভাবে পাহারা দিচ্ছে পুলিশ। ঝাপসা হয়ে যাওয়া উইন্ডশীল্ড'র পেছন থেকে র‍্যাবের অফিসার তাকিয়ে আছেন। একজন মুরুব্বিমত অফিসার এগিয়ে এসে আমার থেকে ছাতাটা চেয়ে নিলেন। আমি গিয়ে দাঁড়ালাম তাদের গাড়ির আশ্রয়ে। বৃষ্টিতে অসহায় হয়ে অথবা অলস হয়ে র‍্যাবেরা গাড়ি থেকে নামছে না। আমি বৃষ্টি দেখছি। অফিসার কিছুক্ষণ পর ছাতা দিয়ে গেলেন। আবারো ছাতা মাথায় আধোভেঁজা হয়ে বাসের জন্য অপেক্ষা করছি। প্রধানমন্ত্রী তখনো যাননি। শূন্য রাস্তায় হুশ-হাস করে দু'একটি প্রাইভেট কার চলে যাচ্ছে। এবার এগিয়ে এলন একজন পুলিশ অফিসার। ছাতাটা নিলেন। আমি গিয়ে আশ্রয় নিলাম একটা উঁচু দালানের নিচে। বিলবোর্ডে বাধা পেয়ে বৃষ্টির ফোটাগুলো শতটুকরো হয়ে গায়ে এসে পড়ছে। আকাশ দেখা যায় না। কিন্তু ফোটাগুলো ঠিকই জায়গা খুঁজে নিয়ে চলে আসছে। অফিসার ফিরে এসে ছাতা দিয়ে গেলেন, সাথে ধন্যবাদ। প্রধানমন্ত্রীর গাড়ি বহর চলে গিয়েছে। বাস আসছে। ঠায় অপেক্ষায় ছিলাম ২৫ মিনিট। শ'খানেক মানুষ। ২৫ মিনিট ধরে বৃষ্টিই দেখছিলো। আমার মতই? নাকি শুন্য রাস্তায় কোন যানবাহন, গন্তব্যের তাগিদে বৃষ্টির পর্দা সরিয়ে বাসের প্রতীক্ষায় ছিলো।

Comments

Popular posts from this blog

রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাপানের নীরবতা

রক্ত পরীক্ষা (Blood test) এর অর্থ বুঝুন

Nostro, Vostro এবং Loro account