ইলুমিনিটি- আমেরিকার স্থপতি ম্যাসন আর একচোখা 'দাজ্জাল'

জনপ্রিয় ভ্রমন কাহিনী লেখক বুলবুল সারোয়ারের 'স্বপ্নভ্রমন জেরুসালেম' বইটি পড়ছি মন্ত্রমুগ্ধের মত। জেরুসালেমের তীর্থস্থানের সীমানা ছাড়িয়ে লেখক ঐ স্থানের সাথে জড়িত ঐতিহাসিক ঘটনাগুলোকে তুলে এনেছেন অসাধারণ বর্ণনার ঢঙ্গে। এমনিতেই বুলবুল সারোয়ারের লেখা পড়লে মনে হয় আমিও বুঝি স্বশরীরে ঘুরে বেড়াচ্ছি লেখকের সাথে। পড়তে পড়তে সামনে পেয়ে গেলাম ইলুমিনিটি শুরুর ঘটনা। ইলুমিনিটির সাথে জড়িত ম্যাসনদের ইতিহাস সম্পর্কে ঘাটতে গিয়ে এক বিরাট ধাক্কা খেলাম। নেট সার্ফিং করে জানা কিছু তথ্য খুব সংক্ষেপে এখানে উল্লেখ করলাম। 

'স্বপ্নভ্রমন জেরুসালেম' বইটির কিছু ঐতিহাসিক ঘটনা খুবই ইন্টারেস্টিং। আশা করছি সুযোগ পেলে অন্যদের সাথে শেয়ার করবো, ইনশা আল্লাহ।

যেভাবে শুরু হলো ইলুমিনিটি


হিরাম আবিফের রূপকথা পুরো পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী গুপ্ত-রহস্য। টায়ারের রাজা হিরামের কাছে যখন নবী সোলেমান (আ:) তার উপাসনালয় গড়ার জন্য সাহায্য চান- তখন বিধবার পুত্র (আবিফ) হিরামকে পাঠান রাজা হিরাম। তার নির্মাণ দক্ষতা ছিল সীমাহীন। বলা হয়- স্বর্ণের সাথে রৌপ্য ও লৌহ; পাথরের সাথে কাঠ এবং রত্ন; গোলাপির সাথে নীল কিংবা কাপড়ের ভাঁজে রেজিনকে গাঁথার কায়দা পুরো দুনিয়ায় তারচেয়ে ভালো কেউ রপ্ত করতে পারেনি। তদুপরি তার ছিলো নবীর মাধ্যমে ‘ঐশ্বরিক’ যোগাযোগ- যাকে ‘গুপ্ত শক্তি’ হিসেবে গণ্য করে ম্যাসনরা। এই শক্তি তিনি দিতে চেয়েছিলেন তার শ্রেষ্ঠ শিষ্যদের- মন্দির নির্মাণ শেষ হলেই। কিন্তু লোভী তিন জন নির্মাতার অতটা ধৈর্য্য ছিল না। তারা এক সন্ধ্যায় পবিত্র মন্দিরের দরোজা আটকে দেয়। জবরদস্তির মুখেও হিরাম যখন রাজি হয় না গুপ্তমন্ত্র প্রদানে- তারা তাকে আঘাত করে পশ্চিম দরোজায়- দক্ষিণ এবং উত্তর দরোজায়- এবং সবশেষে মন্দিরের গোপন গর্ভে। তার চিৎকার প্রতিধ্বনি হয় N-E-W-S এ অর্থাৎ নর্থ ইস্ট ওয়েস্ট সাউথে। ছড়িয়ে পড়ে পৃথিবীর প্রথম ‘সংবাদ’- মানে দুসংবাদ- কে আছ বাঁচাতে পারো বিধবা পুত্রকে/ হিরাম নামের এক ঐশী নির্মাতা/ যে রাখে খোদার জ্ঞান- কালের কসম/ সোলেমান ছাড়া কেউ নেই যে বিশ্বাসী.....।

বিশ্বাসী বন্ধুরাই হিরাম আবিফকে আহত করল- ঘাড়ে, গলায়, বুকে এবং মস্তিস্কে। তার আর্তনাদ ক্ষীণ হতে হতে শেষ হলো মৃত্যুতে। তবু তিনি তার ঐশ্বরিক জাদু আক্রমনকারীদের দিলেন না। বেছে নিলেন চির বিদায়কে।

সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত্রি হলো। হতাশ ও ভীত খুনিরা তার লাশ সোনালি-দরোজা দিয়ে বয়ে নিয়ে গেল মন্দিরের বাইরে এবং গোপনে কবর দিলো পাশের জঙ্গলাকীর্ণ টিলায়।

সকাল হতেই খোঁজ পড়ল হিরামের। ‘নিউজ’ দ্রুতই পৌঁছল নবী-রাজা-জাদুকর-অলৌকিক শক্তিধর মহামান্য বাদশাহ সোলেমানের (আ:) এর কাছে। সাথে সাথেই তিনি আঁচ করলেন- কি হতে পারে। সাত জন সাহসী ও দূরদর্শী ম্যাসনকে তিনি পাঠালেন হিরামের লাশ খুঁজে বের করতে। তিন দিকে গেলো ছয় জন এবং বাকিজন রাজার সাথে গেলো পূর্ব দিকে। খুঁজে পাওয়া গেল হিরামের লাশ। আনা হলো মন্দির প্রাঙ্গনে। স্তম্ভিত সোলেমানের চোখে অশ্রু। যে-নকশা তিনি অলৌকিকভাবে পেয়েছিলেন আসমানি শক্তির কাছ থেকে- সেই নকশা তিনি বুঝলে কী হবে- তিনি তো নির্মাতা নন।

দ্রুতই খুঁজে বের করা হলো খুনি জুবেলা, জুবেলো এবং জুবেলাসকে। শাস্তিও পেল তারা যথাযোগ্য। কিন্তু ম্যাসনদের মধ্যে লোভের আগুন ছড়িয়ে গেলো। একদল সোলেমানের (আ:) মন্দির নির্মাণে ব্যাপৃত রইল সততা ও নিষ্ঠার সাথে। অন্যদলের বুকের ভেতর লকলক করে উঠল লোভ। তাদের ধারণা হলো- খোদা যদি শক্তির আধার হন আর সোলেমান হন তার প্রতিনিধি। তাহলে আমরা.....আমরা....কোথায় যাব? আমরা যাব বিপরীত দিকে। কে সেই বিপরীত মেরু? লুসিফার- লুসিফার। শুরু হলো এক নতুন ধারা- ব্ল্যাক ম্যাজিক বা শয়তান- উপাসনা। নিশ্চিত করা না গেলেও ঐতিহাসিকদের ধারণা- সেই থেকেই এই ধারার সূত্রপাত। পৃথিবীর সবচেয়ে দক্ষ নির্মাতা, প্রকৌশলী আর ডিপ্লোম্যাটদের একটি দল হয়ে উঠল বিজাতীর সাধক।
ইলুমিনিটির প্রতীক
সামাজিকভাবে যারা সবচেয়ে উঁচু, যাদের সম্মান প্রায় আকাশছোঁয়া, আর যাদের শক্তির কোন তুলনা নেই- যেমন রানি ভিক্টোরিয়া কিংবা স্যার চার্লস ওয়ারেন- তারা যদি হিরাম আবিফের ‘গুপ্ত চাবি’র কথা বলে বেছে নেয় স্যাটানিক ভার্সেস- খারাপ তো লাগারই কথা। যদি ড্যান ব্রাউন কিংবা ক্রিস্টোফার নাইট ও রবার্ট লোমাস এর মতো মানুষেরা এই রহস্যের জটের উপর আলো না ফেলতেন তো আমরা একে চিরকাল “ফান” বলেই উপেক্ষা করতাম। কিন্তু একবিংশ শতাব্দী ছুটছে আলো তথা ডিজিটের উপর ভর করে। ভেড়ামারার সাধারণ এক কৃষক সন্তান জ্ঞানী, না কানাডার প্রধানমন্ত্রী- সেটা এখন আর ম্লেচ্ছ-ব্রাক্ষ্ণণ দিয়ে বিচার হবার নয়। মানুষের দ্বারা আরোপিত সব বর্ডার ভেঙ্গে দিয়েছেন বিল গেটস। তোমায় প্রণাম, হে আলোর বরপূত্র!

আলো থেকেই চলে এলো ইলুমিনিতির বিষয়টা। আলো যাদের চিহ্ন, জ্যামিতির ত্রিকোণ আর পরিমাপের স্কেল যাদের প্রতীক- আর কেন্দ্রে যাদের “জি” মানে গড- তারা যদি হয় অন্ধকারের উপাসক- তাহলে আর কী বলার থাকে!


‘স্বপ্নভ্রমন জেরুসালেম’ (পৃষ্ঠা- ১৬১ হতে ১৬৩)

ম্যাসনদের পরিচয়


এখানে যে ম্যাসনদের কথা বলা হয়েছে, যাদেরকে আবার ফ্রিম্যাসনও বলা হয়ে থাকে তাদের সম্পর্কে খুব সংক্ষেপে কিছু তথ্য দেবো। আশা করছি এটি আপনার চিন্তাকে খুব বড়ো একটি ধাক্কা দেবে।

ফ্রিম্যাসনারি বিশ্বের প্রাচীনতম গুপ্ত গোষ্ঠী যারা ইহুদীদের দ্বারা পরিচালিত। যে গোষ্ঠীর উদ্ভব হয়েছিল ঈসায়ীপূর্ব ৩০০০ অব্দের জেরুজালেমের টেম্পল অভ সলোমন-এর কারিগরদের ভিতর। যে গোষ্ঠীটির সঙ্গে জড়িত মধ্যযুগের ক্রুসেডার কুখ্যাত নাইট টেম্পলারদের বিচিত্র অনৈতিক কর্মকান্ড; যে গোষ্ঠীর সঙ্গে জড়িত বাগদাদ শরীফ ও কর্ডোভা হতে চুরিকৃত জ্ঞান হতে ষোড়শ শতকের ইউরোপের জ্ঞানদীপ্তির যুগ বা ‘এজ অভ এনলাইটমেন্ট’ এবং সপ্তদশ শতকের ‘ম্যাসনিক গিল্ড’ বা ‘রাজমিস্ত্রিদের সংঘ’; সেই গোষ্ঠীই সপ্তদশ এবং অষ্টাদশ শতকে ইংল্যান্ড, ফ্রান্স এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক পটপরিবর্তন এবং সমাজবিপ্লবের পিছনে সক্রিয় ছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অদৃশ্য নিয়ন্তা যে ফ্রিম্যাসনারি গোষ্ঠীটি- সেই গোষ্ঠীর সদস্যদের মধ্যে রয়েছে ফরাসি লেখক ভলতেয়ার, জার্মান সঙ্গীতবিদ মোজার্ট, মার্কিন বৈজ্ঞানিক বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটন থেকে শুরু করে বর্তমান কালে ‘যুদ্ধাপরাধী’ মার্কিন প্রেসিডেন্ট বুশ ।

এই লেখার লিংক পাবেন এখানে।

আমেরিকা কে ‘বানাইলো’


আমেরিকান ডলার দেখেছেন? সেখানে একটা অসমাপ্ত পিরামিডের ছবি আছে। পিরামিডের নিচে লেখা Novus ordo seclorum- মানে নতুন বৈশ্বিক/ওয়ার্ল্ড অর্ডার।



অনেকে বলে থাকেন, এটা আসলে “সেকুলার” ওয়ার্ল্ড অর্ডার। সেকুলার মানে ধর্ম নিরপেক্ষ বা ধর্ম বাদ দিয়ে। আবার উপরে লেখা annuit coeptis-মানে he approves the undertaking (আমেরিকার অধিগ্রহন “তিনি” অনুমোদন দিয়েছেন) ডলারটায় আড় বরাবর আরও লেখা, ‘In god we trust’. 

সবই বোঝা গেলো, কিন্তু আমেরিকার স্থপতি ম্যাসনরা কোন ‘গড’-এ বিশ্বাস করে সেটা নিয়ে প্রশ্ন করে অনেকে। অনেক কনস্পাইরেসি থিওরী মতে, ম্যাসনরা স্যাটানিক। অর্থাৎ তাদের “গড” বা 'তিনি'-টা আসলে লুসিফার/স্যাটান। আশ্চর্যজনক হলেও সত্য, আমাদের নবী (সঃ) যে দাজ্জাল/ এন্টিক্রাইষ্টের বর্ননা দিয়েছেন সেই দাজ্জাল হবে একচোখা,যা মেসনদের প্রতীক all seeing eye এর সাথে মিলে যায়। ধারনা করা হয়, বর্তমান বিশ্ব মেসনদের দ্বারাই পরিচালিত হচ্ছে। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট থেকে শুরু করে ইংল্যান্ডের রানী-সবাই ফ্রি মেসন। শুধু তাই নয়, ইংল্যান্ডের রাজবংশের সাথে আমেরিকার বেশিরভাগ রাষ্ট্রনায়কের রক্ত-সম্পর্ক আছে। আরও অবাক করা বিষয়, ইংল্যান্ডের রাজবংশ ‘windsore’-রা নাকি আসলে মিশরের ফারাওদের বংশধর!!

সেটা যাই হোক, বর্তমান আমেরিকা যে মেসনদের বহু পরিকল্পিত এক ভূমি সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। তাদের “সেকুলার” দুনিয়া পাবার আকাঙ্ক্ষার পাশেই লেখা In god we trust -এ যে গডের কথা বলা হয়েছে সেটা কোন গড?

এটা কি লুসিফার,নাকি প্রাচীন সূর্যদেবতা হোরাস, নাকি জিসাসের গড?
সবকিছু মিলিয়ে মেসনদের কাজকারবার যেন আলো আঁধারে ঘেরা এক রহস্যই সবার কাছে। (তথ্যসূত্র - মূল লেখাটি এ সম্পর্কে আরো বিস্তারিত তথ্য দেবে)




Comments

  1. অনেক ভাল লিখছেন ভাইয়া।☺

    ReplyDelete

Post a Comment

Popular posts from this blog

রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাপানের নীরবতা

রক্ত পরীক্ষা (Blood test) এর অর্থ বুঝুন

Nostro, Vostro এবং Loro account